🌏 অগ্নুৎপাত সম্বন্ধীয় নানা মজার তথ্য 🌍

🌏 অগ্নুৎপাত সম্বন্ধীয় নানা মজার তথ্য 🌍

              অগ্ন্যুৎপাতের মজার তথ্য

⛰️ সাধারণত পৃথিবীর যত ভিতরে যাওয়া যায় ভূপৃষ্ঠ থেকে তত তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। পৃথিবীর ওই অংশের বস্তু সমূহ ( খনিজ পদার্থ , শিলা ও নানা ধরনের গ্যাস ) তরল অবস্থায় এবং আরো নীচে চাপ ও তাপে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ভূ অভ্যন্তরের এই গলিত বা অর্ধগলিত পদার্থকেই বলা হয়ে থাকে ম্যাগমা। এই সমস্ত ম্যাগমা যখন ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত ফাটলের মাধ্যমে প্রবল উর্দ্ধমুখী চাপে উঠে আসার পদ্ধতিকেই বলা হয় অগ্নুৎপাত। 

⛰️ এই বড়ো বড়ো ফাটলগুলোকে বলা হয় কেন্দ্রীয় নল। এই কেন্দ্রীয় নলের চারপাশে আগ্নেয়পদার্থ ক্রমশ জমা হতে থাকে। এবং উঁচু হয়ে আগ্নেয়গিরি তৈরি করে। আগ্নেয়গিরি তিন রকম হয়ে থাকে - আগ্নেয় ভস্ম শঙ্কু , বিস্ফোরিত নল এবং বিমিশ্র আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয় ভস্ম শঙ্কুকে সিণ্ডার কোন বলা হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে ছাই বেশি নিস্ক্রমিত হলে জমা হয়ে তৈরি করে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ফলে আগ্নেয় নলের কিছুটা দূরে আগ্নেয়পদার্থ জমা হয়ে তৈরি হয় । তৃতীয়টির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ভস্ম ও লাভা স্রোতের সঞ্চয়ের মাধ্যমে গঠিত হয় বিমিশ্র শঙ্কু। 

⛰️ অগ্নুৎপাতের সময়ের ভিত্তিতে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : সক্রিয়, সুপ্ত ও মৃত। সক্রিয় আগ্নেয়গিরিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা সবিরাম ও অবিরাম । সবিরাম মানে কিছুদিন ব্যবধানে অগ্নুৎপাত হয় ( কয়েকদিন, কয়েক মাস ও কয়েকবছর ) । অবিরাম সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে সবসময় অগ্নুৎপাত হয় ( মৌনা লোয়া ও কেয়া লোয়া )। সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ( মাউন্ট ফুজি ) । মৃত আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনা নেই। আগ্নেয় শঙ্কুকে দুভাগে ভাগ করা যায়। ( একক শঙ্কু / মুখ্য শঙ্কু , গৌণ শঙ্কু ) । একক শঙ্কুর ক্ষেত্রে একটি জ্বালামুখ দিয়ে লাভা প্রবাহিত হয়। মুখ্য কেন্দ্রীয় নল অবরুদ্ধ হলে এবং পার্শ্ববর্তী ফাটলের সঙ্গে মুখ্য কেন্দ্রীয় নলের নীচের দিক সংযুক্ত হলে গৌণ শঙ্কু অগ্নুৎপাতের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে। 

🌋 ম্যাগমেটিক অগ্নুৎপাত: এক্ষেত্রে ভূ অভ্যন্তরের গ্যাসের চাপে ও ম্যাগমার প্রবল চাপে বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে অনেক উঁচু পর্যন্ত ম্যাগমা বিস্তৃত হয়ে থাকে। প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। 

🌋 প্রিটোম্যাগমেটিক অগ্নুৎপাত : এক্ষেত্রে তাপ সংকোচনের মাধ্যমে অগ্নুৎপাত হয়ে থাকে । লাভা ও জলের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় অগ্নুৎগম হয়ে থাকে। 

🌋 প্রিয়াটিক অগ্নুৎগম: এক্ষেত্রে বাস্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে অগ্নুৎগম হয়ে থাকে। প্রবল উত্তপ্ত জল উত্তপ্ত শিলার সংস্পর্শে এসে বাস্পসহ অগ্নুৎগম হয়। এই অগ্নুৎপাতের শেষে জল ঘনীভূত হয়ে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয় । 

⛰️ অগ্নুৎপাতের শ্রেনীবিভাগ: অগ্নুৎপাতের দুটি মূল শ্রেণীবিভাগ হয় - কেন্দ্রীয় অগ্নুৎগম ও বিদার অগ্নুৎপাত। সাধারণত কেন্দ্রীয় নলের মধ্য দিয়ে বিস্ফোরণ অগ্নুৎপাত হয়ে থাকে। বিদার বা ফাটলের মধ্যে দিয়ে শান্ত ভাবে অগ্নুৎগম হয়ে থাকে । কেন্দ্রীয় অগ্নুৎগমের ফলে আগ্নেয় শঙ্কু , জ্বালামুখ, ক্যালডেরা , গৌণ শঙ্কু তৈরি হয়। বিদার অগ্নুৎগমের মাধ্যমে লাভা মালভূমি ও শিল্ড মালভূমি তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় অগ্নুৎপাত খুবই ধ্বংসাত্মক বিদার অগ্নুৎপাত শান্ত। কেন্দ্রীয় অগ্নুৎপাতে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ও লাভার পরিমান বেশি হয়। বিদারের ক্ষেত্রে ঢাল ও উচ্চতা কম হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় অগ্নুৎপাতে আম্লিক লাভা স্রোতের মাত্রা বেশি থাকে। বিদার অগ্নুৎগমে ক্ষারীয় লাভা দেখা যায়। পৃথিবীর আদিম যুগে বিদার অগ্নুৎপাত বেশি দেখা গিয়েছিল ফাটলে মধ্য দিয়ে। কেন্দ্রীয় অগ্নুৎপাতে নানা শ্রেণী দেখা যায়। বিদার অগ্নুৎপাতের তেমন ভাগ নেই। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অগ্নুৎপাত বায়ুদূষণ ও সম্পদহানিকর । বিদার অগ্নুৎপাত শান্ত ও কম ক্ষতিকর। 

🌋 কেন্দ্রীয় অগ্নুৎপাতের শ্রেনীবিভাগ: 

⭐ হাওয়াই টাইপ : এক্ষেত্রে সবসময় ক্ষারীয় লাভা উদগীরণ হয়। এই লাভার গড় উষ্ণতা ১২০০° সে। আগ্নেয়গিরির উচ্চতা কম ও চ্যাপ্টা মতো হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগ্নেয় পদার্থ অনেক উঁচুতে উঠে বাতাসে ঠাণ্ডা হয়ে বাদামী বা সোনালী রঙের সরু চুলের মতো গ্লাস বা গঠন তৈরি করে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের দেবতা পিলির নাম অনুসারে এই আগ্নেয় সরু সরু গঠনকে পিলির চুল বলা হয় । 

⭐ স্ট্রম্বলি টাইপ : ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরি হল স্ট্রম্বলি ( সিসিলি , লিপারি )। এই অগ্নুৎপাতের সময় আগ্নেয় লাভা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এবং রাতে ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন এলাকাকে আলোকিত করে রাখে এটাই স্ট্রম্বলি টাইপ। এবং স্ট্রম্বলি আগ্নেয়গিরিকে ভূমধ্যসাগরীয় আলোকস্তম্ভ বলা হয়। 

⭐ ভিসুভিয়াস টাইপ :  ইতালির একটি অন্যতম আগ্নেয়গিরি হল ভিসুভিয়াস। গাড় আম্লিক লাভা প্রবাহ দেখা যায়। অগ্নুৎপাতের সময় বিস্ফোরণ ঘটে। ভিসুভিয়াস অগ্নুৎপাতের পরে আগ্নেয়গিরির 

ছাই ও বাস্প ঘনীভূত হয়ে ফুলকপি মেঘ ( Cauliflower cloud ) তৈরি করে থাকে। যার ফলে ব্যাপক বৃষ্টি ঘটায়। 

⭐ ক্রাকাতোয়া টাইপ : ইন্দোনেশিয়ার একটি অন্যতম শক্তিশালী আগ্নেয়গিরি হল ক্রাকাতোয়া। ভয়ঙ্কর অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের আশেপাশে চূড়াটি উড়ে গিয়ে বৃহৎ ক্যালডেরা তৈরি হয়। এর ফলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ও সুনামি হয়। কথিত আছে সুদূর মালয় , অস্ট্রেলিয়া থেকে এই অগ্নুৎপাতের আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। বর্তমানে মৃত আগ্নেয়গিরি। 

⭐ এছাড়া পিলি টাইপ , প্লিনি টাইপ ও ভলক্যানো টাইপ অগ্নুৎগম উল্লেখযোগ্য। এই ধরণের অগ্নুৎগমের মাধ্যমে লাভাস্রোত দেখা যায়। এবং প্রবল বিস্ফোরণ মানুষের জীবন হানি ঘটায় । 

⛰️ কেন্দ্রীয় অগ্নুৎগমে গঠিত ভূমিরূপ : 

কেন্দ্রীয় অগ্নুৎগমের ফলে গঠিত হয় ক্যালডেরা। জ্বালামুখ , প্লাগডোম , থলোয়েড , জ্বালামুখ হ্রদ ও বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা , গৌণ শঙ্কু। 

⭐ ক্যালডেরা : বিস্ফোরণের চাপে আগ্নেয়গিরির শঙ্কু উড়ে গেলে গভীর বা অভীর বৃহৎ আগ্নেয় হ্রদ বা গর্ত তৈরি হয় যাকে ক্যালডেরা বলে। 

⭐ জ্বালামুখ হ্রদ : মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মধ্যে বৃষ্টির জল জমে জ্বালামুখ তৈরি হয় ।

⭐ প্লাগডোম ও থলোয়েড : সাধারণত আগ্নেয় নলের উপর লাভা সঞ্চিত হয়ে উল্টানো প্লাগের ন্যায় দ্বিপার্শীয় খাড়া ঢাল যুক্ত যে গঠন তৈরি করে তাকে প্লাগডোম বলে। এই গঠন ব্যাঙের ছাতার ন্যায় হলে থলোয়েড বলে। 

⭐ বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা : পাতসীমান্ত বরাবর সাগরে অগ্নুৎগম হলে বালি, কোরাল ও আগ্নেয়পদার্থ জমা হয়ে সমুদ্র তলদেশে জমা হয়। পরে সমুদ্র তলদেশ বসে গেলে দ্বীপমালা উত্থান হয়

⛰️ বিদার অগ্নুৎপাতে গঠিত ভূমিরূপ : 

বিদার অগ্নুৎপাতের ফলে মৃদু থেকে মধ্যম ঢাল বিশিষ্ট শিল্ড মালভূমি তৈরি হয়। এছাড়া লাভা জমা হয়ে পড়ে কোমল শিলা ক্ষয় পেতে পেতে কঠিন শিলা সিঁড়ির ধাপের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে যাকে ট্রাপ মালভূমি বলে। যেমন ডেকান্ট্রাপ । 

⛰️ নিঃসারী ও উদবেদী অগ্নুৎগম : 

সাধারণত ভূপৃষ্ঠের বাইরে লাভা নির্গমন ও সঞ্চয় হলে তাকে নিঃসারী অগ্নুৎগম বলে। অন্যদিকে একটা উদাহরণ টেনে আনি : " ফুটবল খেলতে গিয়ে আচমকা লেগে গেলে  কালশিটে পড়ে মানে ভেতরে রক্ত তঞ্চিত হয় " । তেমনি ভূ অভ্যন্তরের মধ্যে অগ্নুৎগম হয়ে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয় শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে তাকে উদবেদী অগ্নুৎগম বলে। সিল , ডাইক , ল্যাকোলিথ , লপোলিথ , ব্যাথোলিথ উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ। 

⛰️ পাতসীমান্ত , অগ্নুৎগম ও ভূমিকম্প : পাতসীমান্ত বরাবর অগ্নুৎগমের পরিমান বেশী হয়। 

⭐ প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা : প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে অভিসারী পাতসীমান্ত (➡️⬅️) বরাবর আগ্নেয়গিরি গুলি পর্যায়ক্রমে বলয়ের ন্যায় অবস্থিত ( কামচাটকা , শাখালিন , জাপান , ইন্দোনেশিয়া ) তাই এই অঞ্চলকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলা হয়। এই অঞ্চলে অগ্নুৎগম ও পাতের সংঘর্ষের ফলে ব্যাপক ভূমিকম্প হয় । 

⭐ অন্যদিকে প্রতিসারী পাত সীমান্ত বরাবর নতুন সমুদ্র তলদেশে ও MOR বা মিড ওশেনিক রিজ তৈরি হয় । যার মূল কারণ অগ্নুৎগম ।

লেখা :অর্ঘ্য বটব্যাল

পর্যালোচনা: অর্ঘ্য বটব্যাল।