সমুদ্র জলের লবণতা (Salinity of ocean water)

    (পৃথিবীর সমুদ্রজলের লবণতার
                    নিয়ন্ত্রকসমূহ)
পৃথিবীর সর্বত্র সমুদ্রজলের লবনতার পরিমাণ এক নয়। সমুদ্রজলে লবনতার নিয়ন্ত্রকগুলি হলো:

A.বাষ্পীভবন~সূর্যতাপে সমুদ্রের জল থেকে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় কিন্তু লবণ বাষ্পীভূত হয় না।ফলে বাষ্পীভবনের কারণে সমুদ্র জলের লবনতা আপেক্ষিকভাবে বেড়ে যায়।
1.নিরক্ষীয় অঞ্চল~
নিরক্ষীয় অঞ্চল অধিক উষ্ণ হলেও বাষ্পীভবনের হার ক্রান্তীয় অঞ্চলের তুলনায় কম এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে লবণতার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।
2.ক্রান্তীয় অঞ্চল~
ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে অধিক বাষ্পীভবন,অধিক উষ্ণতা এবং বায়ুর আদ্রতা অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় লবণতার পরিমাণ বেশি।
3.হিমমন্ডল~
হিমমন্ডলে বাষ্পীভবনের হার কম বলে মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের জল কম লবণাক্ত।
4.দিক ও ঋতুর প্রভাব~ 
বাষ্পীভবনের পরিমাণ সমুদ্রের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং বিভিন্ন ঋতুতে কিছুটা বাড়ে বা কমে।
5.বায়ুপ্রবাহের প্রভাব~
নিয়ত ও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বাড়ে।শুষ্ক ও শীতল বায়ু উষ্ণ সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বাষ্পীভবন বেড়ে যায়।
6.বাষ্পীভবন ও বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক~
বৃষ্টিবিহীন দিনের সংখ্যা কমলে বাষ্পীভবন যেমন বাড়ে তেমনি বৃষ্টিযুক্ত দিনের সংখ্যা বাড়লে বাষ্পীভবন কমে।
 ফলে সমুদ্র জলের লবনতা তারতম্য ঘটে।
B.অধঃক্ষেপণ~
অধঃক্ষেপণ এর মাধ্যমে সমুদ্রে বিশুদ্ধ জলের যোগান বেড়ে যায়।
 ফলে সমুদ্র জলের লবনতা কমে।
1.নিরক্ষীয় অঞ্চল~
এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চল অধিক উষ্ণ হলেও নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রের জল লবণাক্ত (35%.)
2.উপক্রান্তীয় অঞ্চল~
নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণে উপক্রান্তীয় বলয়ে অধিক উষ্ণতা এবং অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাতের কারণে লবনতা পরিমাণও বেশি।
3.মেরু অঞ্চল~
মেরুবৃত্ত ও মেরু অঞ্চলে প্রচুর তুষারপাত হয় এবং স্থলভাগে গঠিত হিমবাহগুলি থেকে হিমশৈল উৎপন্ন হয়।এই হিমশৈলগুলি থেকে প্রচুর বরফ গলা মিষ্টি জল পাওয়া যায়।যার ফলে মেরু ও মেরুবৃত্ত সন্নিহিত অঞ্চলে সমুদ্রজলের লবনতা কম।
C.নদীর জলের যোগান~
নদীর সুপেয় জল যেখানে সমুদ্রে পতিত হয় সেখানে সমুদ্র জলের লবনতা কমে
1.বড়ো নদীর মোহনা~
এই কারণে আমাজন,কঙ্গো,নাইজার,গঙ্গা,নিল,সেন্ট লরেন্স প্রভৃতি দীর্ঘ নদীগুলির মোহনায় লবনতার পরিমাণ বেশ কম।এমনকি আবদ্ধ সমুদ্র গুলিতেও দেখা যায় যে নদীর জলের যোগান যেখানে বেশি সেখানে কিছুটা কম।
2. বাল্টিক সাগরের অবস্থা~
বাল্টিক সাগরের বোথনিয়া উপসাগরে অনেক নদী এসে পড়ায় লবণের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে প্রায় 5 সহস্রাংশ কম।
3. কৃষ্ণ সাগরের অবস্থা~
ডানিয়ুব,নিস্টার,নিপার প্রভৃতি নদী কৃষ্ণ সাগরে পতিত হওয়ায় এই সাগরে লবণের পরিমাণ মাত্র 18 সহস্রাংশ।
D.বায়ুচাপ ও বায়ু প্রবাহ~
বায়ুরচাপ ও বায়ুপ্রবাহের জন্য সমুদ্রের জলের লবনতা তারতম্য ঘটে।
উদাহরণ~
১.উত্তর সাগরের তুলনায় বাল্টিক সাগরের ওপর বায়ুর চাপ কম।
 এর ফলে উত্তর সাগর থেকে অধিক লবণাক্ত জল বাল্টিক সাগরে প্রবেশ করে সেখানকার লবনতা বাড়িয়ে তোলে।
২.আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে উত্তর পূর্ব আয়ন বায়ু উষ্ণ ও অধিক লবণাক্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের জলকে উপকূল থেকে দূরে অপসারিত করে।
 এবং এর ফলে সমুদ্রের নিচের স্তরের কম লবণাক্ত জল উপরে উঠে এসে লবণের পরিমাণ কমায়।
*ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব~
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সমুদ্র জলের অভাধ মিশ্রণ ঘটে ফলে লবণ ও তার পরিমাণ বাড়ে কমে।
E.সমুদ্রজলের স্থানান্তর~
সমুদ্রজলের স্থানান্তরের ফলে লবনতা তারতম্য ঘটে-
1.জোয়ার ভাটা-জোয়ার ভাটার কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সঙ্গে নদীর মিষ্টি জলের মিশ্রণ ঘটলে নদীর মোহনার কাছে সমুদ্র জলের লবনতা কিছুটা কমে।
2.সমুদ্রস্রোত-শক্তিশালী সমুদ্রস্রোতগুলি অধিক লবণাক্ত জলকে মেরুপ্রদেশের দিকে,পশ্চিম উপকূলের জলকে পূর্ব উপকূলের দিকে এবং উন্মুক্ত সমুদ্র থেকে সমুদ্রজল কোথাও কোথাও  আবদ্ধ সমুদ্রে স্থানান্তরিত হয়।
3.পরিচলন স্রোত- পরিচলন পদ্ধতিতে সমুদ্রের তলদেশের জল ওপরে উঠে আসে এবং ওপরের জল নিচে নেমে যায়।
 এভাবে সমুদ্র জলের স্থানান্তর তারতম্য ঘটায়।

Comments

Popular posts from this blog

পাত সঞ্চালন তত্ত্ব(Plate tectonic theory)

⛰️ কার্ষ্ট ভূমিরূপ গঠন পক্রিয়া ও দ্রবণ কার্য 🌍

🌍চ্যুতি ও চ্যুতি দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ🌍