🌍 সমস্থিতি মতবাদের পরীক্ষা ও আলোচনা 🌍

🌍 সমস্থিতি মতবাদের পরীক্ষা ও আলোচনা 🌍

------------------------------------------------------------------

       সমস্থিতি মতবাদের পরীক্ষা ও আলোচনা 

🛑 সমস্থিতির ধারণা : সাধারণত বিশ্বব্যাপী ভারসাম্য রক্ষার অপর নাম হল সমস্থিতি। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুকে মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে নিজের কেন্দ্রের দিকে টানে। অন্যদিকে পাত সংস্থান তত্বের মাধ্যমে নতুন নতুন পাত ও পর্বতের সৃষ্টি হয়। কোথাও গলন , কোথাও গঠন এই ধারাবাহিক পদ্ধতি সামান্য বিচ্যুত হলেই ভারসাম্যের অভাব দেখা যায়। এই ধারাবাহিক ভারসাম্য রক্ষার পদ্ধতি হল সমস্থিতি। এপ্রসঙ্গে বিজ্ঞানী এয়ারির ( ১৮৫৫) ও বিজ্ঞানী প্রাটের (১৮৬৮ ) সমস্থিতি মতবাদের তত্বদুটি পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হল ।

⭐এয়ারির সমস্থিতি মতবাদের পরীক্ষার উপকরণ : একটি সাধারণ বাটি , সম আরতন ও ঘনত্বের দুটি বা তার অধিক পাত্র , জল।  

⭐ পদ্ধতি: সাধারণত একটি বাটিতে ( অর্ধেক বা তার বেশি জল , অন্যকোনো ঘন তরল পদার্থ নেওয়া হল। এরপর দুটি ছিপির একটিকে খালি রাখা হল অন্যটিতে সম্পূর্ণ জল ভর্তি করে বাটির জলের উপর রাখা হল। ( যদি বড়ো পাত্র হয় সেক্ষেত্রে তিন বা চারটি আলাদা আলাদা মাপের জল নিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে )। এছাড়া বিভিন্ন মাপের কাঠের টুকরা বা ব্লক নিয়েও পরীক্ষা করা যেতে পারে। 

⭐ বিষয়সংক্ষেপ : আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখেছি ভারী বস্তু কোনো তরল বা সান্দ্র পদার্থের উপর দিলে তরলবস্তুর অপসারণ ক্ষমতা বেশি হয়ায় অনেক বেশি তরলে নিমজ্জিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে হালকা বস্তুর অপসারণ ক্ষমতা অনেক কম হয়ে থাকে। ফলে একটি পালককে জলের উপর ফেললে ভাসতে থাকে। অন্যদিকে হিমশৈলের এক-তৃতীয়াংশ জলের উপর বাকিটা জলের নীচে থাকে। এর পিছনে রয়েছে নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র। যে বস্তুর আকর্ষণ ক্ষমতা বেশি  সেই বস্তু অনেক গভীর পর্যন্ত ভূ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যাকে ( Root বা মূল বলা হয় )। 

⭐ ব্যবহারিক প্রমাণ : 

🌍 সাধারণত পর্বত শৃঙ্গ গুলি যত উঁচু তার মূল ভূ অভ্যন্তরের অনেক নীচে প্রোথিত বা পোঁতা থাকে। তাই মাউন্ট এভারেস্ট , কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ অন্যান্য পর্বত শৃঙ্গ গুলির এক তৃতীয়াংশের তৃতীয়াংশ সমুদ্র পৃষ্ঠের নীচে সিমাস্তর ও গুরুমণ্ডল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। কিন্তু ভূ অভ্যন্তরের অনেক নীচে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে বলে পর্বতের নীচের অংশ গলিত অবস্থায় থাকে তাই দেখা যায় না। 

🌍 পার্বত্য অঞ্চলের উপরিভাগে ক্ষয়ের ফলে চাপ হ্রাস পায় তাই পর্বতশৃঙ্গ গুলি উর্দ্ধমুখী হয়ে থাকে। অন্যদিকে উপত্যাকায় সঞ্চয় বেশি হলে ভরবাড়ে তাই নীচের দিকে নামতে থাকে ও বসে যায়। আরোহণ ও অবরোহনের ফলে সমস্থিতি তৈরি হয়।

🌍 ভূপৃষ্ঠের হালকা অঞ্চল গুলি ভূ অভ্যন্তরের কমগভীরে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে আয়তন ও উচ্চতার ভিত্তিতে যতবেশি হবে তত ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করবে যেমন পার্বত্য অঞ্চলের মূল। 

🌍 মহাসাগরীয় পাতাগুলি ভারী হয়ায় অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের গভীরে অবস্থান করে মহাদেশীয় পাতের তুলনায়। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহাদেশীয় পাতের তলায় মহাসাগরীয় পাত প্রবেশ করে ও গলিত হয়। 

⭐ প্রাটের সমস্থিতি মতবাদের পরীক্ষার উপকরণ:

দুটি ভিন্ন উপকরনের তৈরি বোতল ( একটি প্লাস্টিকের ও অন্যটি কাঁচের ) যদিও ভিন্ন আকৃতির হলে আরো ভালো হতো। একটি বড়ো পাত্র , জল। 

⭐ পদ্ধতি : সাধারণত একটি আংশিক জলভর্তি বাটিতে দুটি ভিন্ন আয়তন ও ঘনত্বের বোতল রাখা হল । একটি প্লাস্টিকের খুবই হালকা বোতল। অন্যটি কাঁচের জলপূর্ণ বোতল। 

⭐ পর্যবেক্ষণ: দেখা যাচ্ছে দুটি বোতলের তলদেশে বাটির তলদেশ স্পর্শ করেছে। ধরে নেওয়া যাক এই তল দুটি বোতলের উপরেই একধরনের বাঁধা প্রয়োগ করেছে এই তলের পর আর ঘনত্ব অনুসারে ভারী পদার্থের নীচে নামার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে না। তাই বাটির তলদেশকেই ধরা হল এখানে প্রতিবিধান তল বা লেভেল অফ কমপেনশেসন। সাধারণত যে তলে ভিন্নধর্মী ব্লকের চাপ ও ঘনত্ব প্রায় সমান হয়ে থাকে তাকেই প্রতিবিধান তল বলা হয়। এর নীচে আর ব্লকের অনুপ্রবেশ দেখা যায় না। 

⭐ বাস্তবিক প্রয়োগ : 

🌍 সাধারণত ভূ পৃষ্ঠের উপর ভিন্ন ঘনত্বের বস্তু , শিলাসমূহের চাপ আলাদা আলাদা হলেও ভূ অভ্যন্তরে অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের কাছে সান্দ্রতার পরিমান বেশি হয়ায় একটি কাল্পনিক তল বরাবর সমস্ত ঘনত্বের সমন্বয় হয়ে থাকে। তারপর আর শিলাস্তরের অবনমন দেখা যায় না। ঘনত্ব , চাপ ও প্লবতার বাঁধা এই প্রতিবিধান তল তৈরি করে থাকে। এই প্রতিবিধান তল একটি কাল্পনিক তল। 

প্রাটের মতে ভূপৃষ্ঠের উপরেই শিলাসমূহের ঘনত্ব মাত্রার তারতম্য হয়ে থাকে। কিন্তু Vertically একটি ভূ অভ্যন্তরের তলে সমস্ত শিলাস্তরের সমন্বয় হয়ে থাকে। 

উপসংহার : সাধারণত উলম্ব সমস্থিতি ও অনুভূমিক সমস্থিতির দ্বারাই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে। সাধারণত প্রতিনিয়ত সমুদ্র তলদেশের বিস্তৃত হচ্ছে মহাসাগরের বুকে। পুরানো সমুদ্র তলদেশীয় পাত সরে আসছে মহাদেশ সংলগ্ন এলাকায় এবং সেই জায়গায় মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা বরাবর অগ্নুৎগমের ফলে নতুন মহাসাগরীয় পাত সৃষ্টি হচ্ছে। পুরাতন সমুদ্র তলদেশীয় পাত মহাদেশীয় পাতের তলদেশে সাবডাকশান অঞ্চল বরাবর প্রবেশ করছে এবং গলছে । তাই পৃথিবীর আয়তনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকছে। এই ভাবে সৃষ্টি ও ধ্বংসের খেলার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার অপর নাম সমস্থিতি। 

লেখা :অর্ঘ্য বটব্যাল

পর্যালোচনা: অর্ঘ্য বটব্যাল