⛰️ কার্ষ্ট ভূমিরূপ গঠন পক্রিয়া ও দ্রবণ কার্য 🌍
⛰️ কার্ষ্ট ভূমিরূপ গঠন পক্রিয়া ও দ্রবণ কার্য 🌍
( ⭐ চার্ট ও পর্যালোচনা : অর্ঘ্য বটব্যাল । )
-----------------------------------------------------------------
🌍 নদী , বায়ু ও হিমবাহের পাশাপাশি চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে জলের সাথে দ্রবণের ফলে এক বিশেষ ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে যাকে কার্স্ট ভূমিরূপ বলা হয়। যুগোশ্লোভাকিয়ার কার্স্ট অঞ্চলের নাম থেকে পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে এই প্রক্রিয়ায় নানা ভূমিরূপ গড়ে ওঠে তাকে কার্স্ট ভূমিরূপ বলা হয়।
⭐ সাধারণত চুনাপাথরের দ্রবণক্রিয়ায় গড়ে ওঠা এই ভূমিরূপে ক্ষয় ও সঞ্চয় লক্ষ করা যায়। এছাড়া ভৌম জলস্তরের দ্বারাও চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়।
⭐ রাসায়নিক সমীকরণ :
Caco3+H20 = Ca(HCo3)2 . সাধারণত ক্যালসিয়াম কার্বনেট যুক্ত শিলাস্তরে জলের বিক্রিয়ার দ্বারা ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট গঠিত হয়। ফল স্বরূপ শিলাস্তরে রসায়নিক আবহবিকার হতে থাকে ও ক্ষয় হয়। এই প্রক্রিয়াকে কার্বোনেশন বলা হয়। অন্যদিকে ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট থেকে জল মুক্ত হলে ডিকার্বোনেশন বলে। এছাড়াও কার্স্ট অঞ্চলে নদীর দ্বারাও ক্ষয় হয়ে থাকে। কোনো কোনো স্থানে গুহার ছাদ ধ্বসে যায় ভূমিকম্পের ফলে এই ভাবে যান্ত্রিক পক্রিয়ায় ক্ষয় হয়ে থাকে কিছুটা।
⭐ ক্ষয়চক্র : সাধারণত এই অঞ্চলে প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট ছোট জলধারার দ্বারা দ্রবণের মাধ্যমে ক্যারেন বা ল্যাপিস তৈরি হয়। এই ক্যারেন দেখতে কিলকাকার। পরবর্তীতে ক্যারেন গুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে আরো গভীর নদী উপত্যকা তৈরি করে । পরবর্তী পর্যায়ে কোথাও কোথাও দ্রবণ কার্যের দ্বারা হোল তৈরি হয়। যেগুলোকে সিঙ্ক হোল বলে। এই সিঙ্ক হোল গুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে আরো বড়ো আকারের দ্রবণ কার্যের দ্বারা ডোলাইন তৈরি করে থাকে। ডোলাইন দ্রবণ , ধ্বস , মিশ্র ডোলাইন এই তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাবে ধীরে ধীরে ক্ষয়ের ফলে ভূমির উচ্চতা কমতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে ও শেষ পর্যায়ে সুবৃহৎ অবনমিত ক্ষয়িত অগভীর পোলজে গঠিত হয়। এই পোলজে গুলির প্রান্তভাগ খাড়া প্রাচীরের মতো সীমানা গঠন করে থাকে যাকে ইউভালা বলে। এই ভাবে কার্ষ্ট অঞ্চলের ক্ষয়চক্র চলতে থাকে।
⭐ কার্স্ট ভূমিরূপ গঠনের শর্ত :
🌍 সাধারণত ভূমিভাগের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছুটা উঁচু হতে হবে ( ১০০০-৩০০০ মিটার )
🌍 বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি হতে হবে। যাতে পর্যাপ্ত জল দ্বারা দ্রবণকার্য যথাযথ হয়ে থাকে।
🌍 সামগ্রিক অঞ্চল চুনাপাথর বা চুন নির্মিত শিলা দ্বারা গঠিত হতে হবে।
🌍 অঞ্চলটি ঢালু ও এবড়ো খেবড়ো হতে হবে। কঠিন ও কোমল শিলার যথাযথ অবস্থান থাকতে হবে।
🌍 এক বা একাধিক নদীসহ উপযুক্ত জলনির্গম প্রণালী থাকতে হবে।
⭐ কার্স্ট অঞ্চলের ক্ষয়কার্য দ্বারা ভূমিরূপ :
🌍 ক্যারেন বা ল্যাপিস : সাধারণত কার্স্ট অঞ্চলে ছোট ছোট জলধারা দ্বারা যে কীলকাকার খাঁজ তৈরী হয় তাকে ক্যারেন বা ল্যাপিস বলে। ক্যারেন বা ল্যাপিসগুলির খাঁজ অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে থাকে। এবং পিকগুলি অত্যন্ত খাড়া হয়ে থাকে। ক্যারেন তিনরকম হয়ে থাকে রিলেল ক্যারেন , রিনেন ক্যারেন ও ট্রিট ক্যারেন। সাধারণত চুনাপাথরের দ্রবণকার্যের দ্বারা ক্যারেন বা ল্যাপিস গঠিত হয়।
🌍 সিঙ্কহোল ও সোয়ালোহোল :
সাধারণত চুনাপাথরের দ্রবণক্রিয়ায় সিঙ্কহোল গড়ে ওঠে। সাধারণত তুলনামূলক কোমলশিলা থাকা অঞ্চলে দ্রবণ কার্যের ফলে ছোট ছোট সিঙ্কহোল গড়ে ওঠে। এগুলি একটি জায়গায় অনেক গর্ত গড়ে উঠতে পারে। এগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে তুলনামুলক বড়ো আকারের সোয়ালো হোল গড়ে তোলে।
🌍 ডোলাইন : সাধারণত ডোলাইন হল একধরণের দ্রবণক্রিয়ায় গড়ে ওঠা অবনমিত গর্ত । দ্রবন পদ্ধতিতে শিলাস্তরের ক্ষয়ের ফলে ডোলাইন গড়ে ওঠে। ডোলাইনের মধ্যদিয়ে ভূ গর্ভস্থ নদী দৃশ্যমান কোনো কোনো সময় হয়। একে কার্স্ট জানালা বলে। ডোলাইন তিন রকমের হয় : দ্রবণ ডোলাইন ( দ্রবণ কার্যের দ্বারা হয়ে থাকে ) , ধ্বস ডোলাইন ভূ অভ্যন্তরের দুর্বল অংশের উপর শিলাস্তর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলে ও পড়ে ভূমিকম্পের ফলে বা গুহার ছাদ ধ্বসে ধ্বস ডোলাইন তৈরি করে। দ্রবণ ও ধ্বসের মাধ্যমে যে ডোলাইন হয় তাকে মিশ্র ডোলাইন বলে ।
🌍 গ্রাইক ও ক্লিন্ট :
সাধারণত ক্যারেন বা ল্যাপিসের খাড়া ভূভাগকে গ্রাইক এবং কীলকাকার অঞ্চলকে ক্লিন্ট বলা হয়।
🌍 কার্স্ট বাতায়ন বা কার্স্ট জানালা :
সাধারণত শিলার ধ্বসের ফলে ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে নীচের ভৌমনদী বা জলস্তর যে গহ্বরের মধ্য দিয়ে দেখা যায় তাকে কার্স্ট জানালা বা কার্স্ট বাতায়ন বলা হয়। সাধারণত ডোলাইনের এক বিশেষ বড়ো রুপ হল কার্স্ট জানালা। দ্রবন বা ধ্বসের ফলে ভূ অভ্যন্তরের শিলাস্তর ফাঁপা হয়ে থাকে। এই দ্রবীভূত বা ধ্বসে যাওয়া অংশ থেকে ভূ অভ্যন্তর পর্যন্ত এক সুবৃহৎ অবনমিত গর্ত দেখা যায়।
🌍 শুষ্ক উপত্যকা ও অন্ধ উপত্যকা :
ভূ পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর গতিপথে যদি ডোলাইন বা হোল তৈরি হয় সেক্ষেত্রে হঠাৎ ঢালের পরিবর্তনের ফলে ভূ পৃষ্ঠের নদীটি ভূ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই গহ্বরের পর থেকে ধারণ অববাহিকার উপত্যকার বাকি অঞ্চলে নদীর জল মাটির নীচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। একে শুষ্ক উপত্যকা বলে। এবং নদী গর্ভে প্রবেশ পর্যন্ত উপত্যকাকে অন্ধ উপত্যকা বলা হয়।
🌍 ইউভালা ও পোলজি :
সাধারণত দ্রবণ পক্রিয়ায় শিলাস্তর আরো ক্ষয় পেয়ে অবনমিত যে বৃহৎ অঞ্চল তৈরি করে তাকে পোলজি বলে। এবং দুটি পোলজির মাঝখানে যে প্রাচীরের ন্যায় তুলনায় খাড়া অঞ্চল দেখা যায় তাকে ইউভালা বলে। এই দুটি ভূমিরূপ কার্স্ট ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে দেখা যায়।
⭐ চুনাপাথরের সঞ্চয়ের ফলে ভূমিরূপ :
🌍 স্ট্যালাকটাইট : ভূ অভ্যন্তরে গুহার ছাদের দেওয়ালে চুনাপাথরের সঞ্চয় কার্যের দ্বারা যে কীলকাকার বা খাড়া ভূমিরূপ তৈরি হয় তাকে স্ট্যালাকটাইট বলে।
🌍 স্ট্যালাগমাইট : গুহার মেঝেতে চুনাপাথরের দ্রবন টপটপ করে পড়তে থাকে। এবং ধীরে ধীরে জল উবে যাওয়ার পর গুহার মেঝে থেকে ফলার ন্যায় যে ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে স্ট্যালাগমাইট বলে।
🌍 স্তম্ভ : স্ট্যালাগমাইট ও স্ট্যালাকটাইট উপর থেকে নীচে নামে এবং নীচে থেকে উপরে ওঠে। একসময় পরস্পর যুক্ত হয়ে যে ভূমিরূপ গড়ে তোলে তাকে স্তম্ভ বলে।
🌍 হেলিকটাইট : হেলিকটাইট সোজা ভাবে না নেমে তীর্যক বা বাঁকা গজালের মতো গড়ে ওঠে।
🌍 পুষ্কর : গুহার মধ্যে ভৌম নদী বা ভৌম জলের জমা হবার পর যে জলাধার বা পুকুরের ন্যায় গঠন তৈরি হয় তাকে পুষ্কর বলে।
Very good job baki gulo dite thakun
ReplyDelete